আগামি ৪ঠা জুন ষষ্ঠ ধাপে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের স্থানীয় পর্যায়ে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। বিগত সব নির্বাচনে আমরা দেখেছি একই দলের অনেকগুলো প্রার্থী প্রতিযোগিতা দিয়ে প্রতিদ্বন্ধিতা করে। বেশ ভালই লাগতো। মানুষ ভালো-মন্দ বিবেচনা করে যোগ্য প্রার্থীকে নির্বাচিত করত। সময়ের প্রেক্ষিতে মানব মনের আর রাজনীতির কৌশলের আধুনিকায়নের ফলে সেই আমেজ আজকাল হারাতে বসেছে। মানুষের পছন্দ বলতে তেমন কিছুই এখন আর চোখে পড়েনা।
সরকার ও সুযোগমত দলীয় প্রতীকে নির্বাচন দেওয়ার হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। হঠকারী এ কারণেই বলছি তাতে লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হয়েছে বলে সুশীল সমাজ মনে করছেন। দলে একজন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়ার ফলে দলীয় নেতাদের মাঝে বিভাজন পরিলক্ষিত হয়। ফলে দ্বন্ধ আর সংঘাত অনেকখানি নিশ্চিত হয়েছে বলে বিগত নির্বাচনকে পর্যালোচনা করলে দেখা যায়। এখন প্রধান দুই দলের মাঝে প্রতিদ্বন্ধিতা হচ্ছে। বিএনপি আর আওয়ামী লীগের মাঝেই ভোটযুদ্ধ। মাঝখানে বিএনপির অন্যতম শরিকদল জামায়াতে ইসলামী তাদের নিজেদের প্রতীকে নির্বাচন করতে না পারায় তারা স্বাভাবিকভাবেই বিএনপির সাথে একাকার হয়ে মনোনয়ন নিচ্ছে যেটা স্বতঃসিদ্ধ প্রমাণিত। ফলে বিএনপির মাঝেই কেবল কলহ আর অভ্যন্তরীণ রোষানলে দাবানলের মতই জ্বলছে। কিন্তু দলীয় সিদ্ধান্ত অনেকে মেনে নির্বাচন থেকে নিজেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। আবার অনেক নিজের সম্ভাব্য বিজয়ের কথা চিন্তা করে দলীয় সিদ্ধান্তকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে আপন সিদ্ধান্তে অনড় থেকে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন করছেন।
ফলশ্রতিতে সেটা এক আজব হ-য-ব-র-ল অবস্থায় উপনীত হয়েছে। এখানে নিজদল নিজের সাথেই প্রতিদ্বন্ধিতা করছে। বন্ধু যেন শত্রুই, শত্রু যেন বন্ধুই। সারাজীবন যাদের সাথে উঠা-বসা করেছেন, এখন তাদের দেখলেই গা জ্বালা দিয়ে ওঠার মতই অবস্থা।
তারই ধারাবাহিকতায় শেষধাপের মতই দেশের অনেক জেলা-উপজেলায় নির্বাচন হতে যাচ্ছে আসছে ৪ঠা জুন ২০১৬ সালে। ককসবাজার জেলার অন্যতম সমৃদ্ধ জনপদ উখিয়া আর টেকনাফ উপজেলা। এ উপজেলায় দলীয় সিদ্ধান্তে নির্বাচন করার প্রার্থীদের চেয়ে এগিয়ে আছেন জনগণের ব্যানারে মনোনীত প্রার্থীদের।
উখিয়া উপজেলার সব ইউনিয়নের নির্বাচনকে ঘিরে ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে নির্বাচনী আমেজ। প্রচার-প্রচারণা
দিন যায় দিন আসে। ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার জন্য অনেকে লড়েছেন। অনেকে ক্ষমতাকে অপব্যবহার করেছেন। মাঝখানে জনগণের ভোগান্তি। স্থানীয় নির্বাচনকে দলীয়ভাবে দেখার কোন সুযোগ নেই বলে ধারণা করেছে সাধারণ জনগণ। তারা মনে করেন জাতীয় নির্বাচন আর স্থানীয় নির্বাচনের মাঝে রয়েছে আকাশ-পাতাল ফারাক।
জালিয়া পালং এর স্বতন্ত্র প্রার্থী জনাব আনোয়ার হোসেন চৌধুরী সাথে কথা বলে জানা যায়, তিনি ও বিজয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। তিনি বলেন- আমি পুরো জালিয়াপালং এর চিত্রকে অনেকটা পাল্টে দিয়েছি। রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালবার্ট, মসজিদ, মাদরাসা নির্মাণসহ অনেক জনকল্যাণমূলক কাজ করেছি। আমি আশা করি মানুষ সে সব মনে রেখে আমাকে নির্বাচিত করবেন।
এ দিকে আবার বিএনপির মনোনীত প্রার্থী জনাব নুরুল আমিন (সাবেক চেয়ারম্যান) এর সম্ভাব্যতা ও চোখে পড়ার মতো। তিনি যেদিকে যাচ্ছেন জনগণ আগের কথা মনে করে তাঁর সাথে গণসংযোগ করছেন বলে মযানা যায়।
এ নির্বাচন নিয়ে রত্নাপালং এর স্বতন্ত্র প্রার্থী জনাব খাইরুল আলম চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন-“জনগণ যেভাবে আমাকে সাপোর্ট দিচ্ছেন, তাতেই প্রতীয়মান হয় আমার জনপ্রিয়তা অনন্য। আমি নিজেকে জনগণের জন্য উৎসর্গ করতে চাই। আমাকে একবার সে সুযোগ দিন। ”
হলদিয়া পালং ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান মন্ত্রী পরিষদ সচিব জনাব শফিউল আলমের ছোটভাই অধ্যক্ষ শাহ আলম আর বিএনপির ধানের শীষ নিয়ে এসেছেন শামশুল আলম বাবুল। এ ক্ষেত্রে বি এন পির প্রার্থী এগিয়ে আছেন বলে অনেকে মন্তব্য করেছেন।
রাজাপালং ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী হয়েছেন জনাব জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী। তিনি অন্যান্য প্রার্থীর চেয়ে এগিয়ে আছেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। উখিয়ার চেহারা তিনি পাল্টে দিয়েছেন বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।
অপরদিকে বিএনপির ধানের শীষ নিয়ে এসেছেন নব্য প্রার্থী কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি শাহাজাহান চৌধুরীর পুত্র তারেক মাহমুদ রাজিব চৌধুরী। উল্লেখ্য যে, জনাব শাহ কামাল চৌধুরী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন তারেক মাহমুদ রাজিব চৌধুরী।
পালংখালী’র স্বতন্ত্র প্রার্থী জনাব এম. গফুর উদ্দিন এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন- ‘‘ আমি গতবারে চেয়ারম্যান থাকা কালে মানুষের সুখে-দুঃখে পাশি ছিলাম। আমার আমলে এলাকার যে উন্নয়ন সাধিত হয়েছে তা অভূতপূর্ব। আশা করব জনগণ আমার কর্মকে মনে করে আমাকে নির্বাচিত করবেন।”
পাঠকের মতামত